পেঁপে চাষ এর আধুনিক পদ্ধতি। হাইব্রিড পেঁপে চাষ ,সার প্রয়োগ ,রোগ পোকা দমন ও উপকারিতা
পেঁপে চাষ এর আধুনিক পদ্ধতি। হাইব্রিড পেঁপে চাষ ,সার প্রয়োগ ,রোগ পোকা দমন ও উপকারিতা
পেঁপে ক্যারিকা Lপরিবারভূক্ত ক্যারিক্যাসি শ্রেনীর ফল।
ভারত তথা বাংলাদেশে বিশেষ করে বাঙালিদের কাছে ফলের মধ্যে পেঁপে একটি জনপ্রিয় ফল। পেঁপে মূলত ক্রান্তীয় এবং উপ-ক্রান্তীয় অঞ্চলে চাষ হয়ে থাকে। পেঁপেকে পুষ্টিকর, অর্থকরী এবং গুরুত্বপূর্ণ ঔষধি গুন্ সম্পূর্ণ ফসল হিসাবে গণ্য করা হয়। কাঁচা এবং উভয়ের বাজার মূল্য সর্বদা অধিক হয়ে থাকে কিন্তু এটি ভাইরাস এবং ছত্রাক জাতীয় রোগে সহজেই আক্রান্ত হয়। সঠিক চাষ পদ্ধতি না জানার কারণে খুব কম চাষীই পেঁপের চাষ করে।
উপযুক্ত সময়ে চারা তৈরী ও রোপন করে কৃষি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে এবং বাগানকে পরিচর্যা করলে ঐ রোগগুলি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। সারা বছর পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণের জন্যে এটি বাড়ির বাগানে চাষ হলেও এখন ব্যবসা ভিত্তিক আধুনিক পদ্ধতিতে পেঁপে চাষ হচ্ছে বিভিন্ন হাইব্রিড প্রজাতির পেঁপে বীজ দিয়ে এবং লক্ষাধিক টাকা আয় করছেন কৃষকরা। কিন্তু দেশি পেঁপের তুলনায় হাইব্রিড প্রজাতির পেঁপে চাষ করলে কয়েকটি মারাত্মক রোগের সম্মুখীন হতে হয় তাই চাষের পূর্বে হাইব্রিড পেঁপে চাষ এর আধুনিক পদ্ধতি ও পেঁপের সঠিক জাত গুলি জেনে করলে রোগ ও অপুষ্টির কারণে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় না কৃষকদের।
(ক) হাইব্রিড পেঁপের জাত ও বৈশিষ্ট :-
(১) ওয়াশিংটন -
এই প্রজাতির পেঁপের পাতার কান্ডগুলি বেগুনী রঙের হয় এবং ফলগুলি মাঝারি থেকে বড় আকৃতিরহ হয় ও এক একটি ফলের ওজন প্রায় ২.৫ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে।
(২) কূর্গ হনি ডিউ :-
এই প্রজাতির পেঁপে গাছ গুলি বেঁটে হয় ফলন বেশি দেয়। গাইনোডায়োসিয়াস গোত্র এটি সব স্ত্রী গাছ হয়।
৩) পুসা ডুয়ার্ফ :-
এই প্রজাতির পেঁপে গাছগুলি বেটে হয়। যেখানে বাতাসের গতিবেগ বেশী সেই সব অঞ্চলে চাষের জন্য উপযোগী। ডায়োসিয়াস গোত্র এটি সব পুরুষ গাছ হয়
(৪) পুসা ম্যাজিস্টিক :-
এই প্রজাতির পেঁপে গাছগুলি ভাইরাস এবং নিমাটোডের প্রতিরোধক হয় এবং এর ফলগুলি মাঝারি আকৃতির ও অন্যান্য পেঁপের জাতের তুলনায় বেশী দিন সংরক্ষণ করা যায়।
৫) পুসা নানহা :- এটিও বেঁটে জাত এর পেঁপে এবং এই প্রজাতির পেঁপে কিচেন গার্ডেনের জন্য ছাদে বা টবে উপযোগী বলে বিবেচিত হয় ।
(৬) তাইওয়ান :-
এই প্রজাতির পেঁপের মাংসগুলি রক্ত লালবর্ণ এবং সুস্বাদু হয় ও গাছ গুলি মাঝারি উচ্চতার হয়ে থাকে।
(৭) টপ লেডি পেঁপে :-
এই প্রজাতির পেঁপের সব গাছেই ফল আসে। স্ত্রী ও পুরুষ বলে আলাদা হয় না। খাটো প্রজাতির হয় এবং ৬ মাস পর থেকে ফল দেয় ও অনেক দিন পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। রিংস্পট রোগ প্রতিরোধী হয়। এক একটি ফলের ওজন ১ থেকে ১.৫ কেজি হয় এবং একর প্রতি ৩০ থেকে ৩৫ টন উৎপাদন পাওয়া যায়। কাঁচা ও পাকা উভয় ভাবেই বাজারজাত করা যায়। পেঁপে পাকলে হলুদ লাল রঙের হয়ে থাকে। গাইনোডায়োসিয়াস গোত্র এটি সব স্ত্রী গাছ হয়।
(৮) রেড লেডি পেঁপে :-
এই প্রজাতির পেঁপে কে বামন প্রজাতি অনেকে বলে থাকে তবে এটি ১০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। ছোট থেকেই ৪ মাস বয়সে ফুল আসে। একটি একটি ফলের ওজন ১-২ কেজি হয় এবং গাছ প্রতি ৮০-১০০ কেজি প্রায় ২-২.৫ বছর পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। পেঁপে পাকলে লাল রঙের মিষ্টি ও সুগন্ধি হয়ে থাকে। গাইনোডায়োসিয়াস গোত্র এটি সব স্ত্রী গাছ হয়।
(৯) গ্রিন শাহী পেঁপে :-
গাছের উচ্চতা ৬-৭ ফুট হয়ে থাকে। ফল ডিম্বাকৃতির হয়। ৪ মাস পর থেকে ফুল ও ফল আসে এবং একর প্রতি ৪০-৫০ টন ফলন পাওয়া যায় ও সারা বছর ফল দেয়।
(১০) হাইব্রিড বাবু :-
এই প্রজাতির পেঁপে গাছ গুলি মাঝারি লম্বা এবং ফলের সাইজ গুলি লম্বা হয়। রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতা সম্পূর্ণ গাছ। ফলন ৩০-৪০ টন একর এবং ২ বছর পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়।
(খ) পেঁপে চাষের উপযুক্ত মাটি :-
পেপে চাষের জন্য জল দাঁড়ায় না এমন বেলে দোআঁশ উর্বর মাটি প্রয়োজন। মাটির pH ৬.৫ থেকে ৭ থাকলে পেঁপের ফলন ভাল হয়।
(গ)পেঁপে চাষের উপযুক্ত আবহাওয়া :-
পেঁপে গাছ উষ্ণ আদ্র আবহাওয়াতে ভাল হয়। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১০০০ মিটার উঁচু পর্যন্ত এটিকে জন্মাতে দেখা যায় ,যদিও তুষারপাত সহ্য করতে পারে না। পেঁপে চাষের জন্য হল ২৫°C থেকে ৩০°C তাপমাত্রা আদর্শ । ১০°C এর নীচে তাপমাত্রা থাকলে গাছের বৃদ্ধি এবং ফলের পরিপক্কতা ব্যাহত হয়। ফুল আসার সময় আবহাওয়া শুষ্ক থাকলে ফল হয় না কিন্তু আবার পাকার সময় ফলের মিষ্টত্ব বৃদ্ধি করে।
(ঘ) পেঁপের বংশবিস্তার পদ্ধতি :-
পেঁপে বীজ থেকেই সাধারণত বংশবিস্তার এর মাধ্যমে চারা তৈরী করে চাষ হয়ে থাকে। পাকা পেঁপের বীজ ৬০-৯০ দিনের মধ্যে অঙ্কুরোদ্গমের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে এবং নতুন টাটকা বীজে সারকোটেস্টা থাকার জন্য অঙ্কুরোদাম হয় না। তাই পেঁপের বীজকে কাঠের গুঁড়ো বা গোবরের ছাই দিয়ে পরিষ্কার করে ধুয়ে নিয়ে ছায়াতে শুকানো হয়।
(ঙ) পেঁপে বীজ থেকে চারা উৎপাদন পদ্ধতি :-
সাধারণত মাটিতে বীজতলা করে চারা তৈরী করা হলেও তাতে অনেক সমস্যা দেখা দেয় তাই বীজতলাতে চারা তৈরীর থেকে আধুনিক পদ্ধতি অবলম্বন করে প্রো ট্রে তে কোকোপিট্ ও ভার্মি কম্পোস্ট দিয়ে প্রথমে ৩ ইঞ্চি চারা করে নিয়ে সেগুলিকে পলিথিন ব্যাগে লাগিয়ে তৈরী চারা মূল জমিতে রোপনের পর নষ্ট কম হয়। এর জন্যে ২০ সেমি x ১৫ সে.মি. সাইজের পলিথিন ব্যাগ গুলি ১:১:১ অনুপাতে বেলে দোআঁশ মাটি, গোবর এবং বালু মিশিয়ে ভর্তি করা হয় এবং প্রো ট্রে থেকে ৩ ইঞ্চি চারা তুলে পলিব্যাগে বোনা হয়। প্রো ট্রে তে বীজ বোনার পূর্বে বীজ গুলিকে ট্রাইকোডারমা ভিরিডি জীবাণু নাশক ( ২ গ্রাম/ লি.) দিয়ে ১২ ঘন্টা ভিজিয়ে হালকা শুকিয়ে বীজ বোনা হয়। সাধারণতঃ দেখা যায় বীজ বোনার পর ১০-২০ দিনের মধ্যে অঙ্কুরোদগম হয়ে থাকে। ২৫ -৩০ দিন পর চারা গুলি তুলে পলিব্যাগে রোপন করে ৬০ দিনের বয়সের চারা কে মূল জমিতে রোপন করা যায়।
চারা উৎপাদনের সময় নেটের ভেতর চারা উৎপাদন করলে ভাইরাস বহন করে যে পোকা গুলো সেগুলি থেকে রক্ষা হয়। চারা উৎপাদন সময়ে ট্রাইকোডারমা ভিরিডি ছত্রাক নাশক (২ গ্রাম/ লি.) দিয়ে স্প্রে করা দরকার হয় এবং বৃদ্ধির জন্যে N:P:K ১৯:১৯:১৯ ন্যানো সার ( ৫ গ্রাম/লি.) দিয়ে স্প্রে করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
(চ)পেঁপে চারা রোপনের উপযুক্ত সময় :-
সাধারণত: সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে মাসে বীজ রোপন করে নভেম্বর ডিসেম্বর মাসে মূল জমিতে পেঁপে চারা রোপন করলে মার্চ এপ্রিল থেকে ছোট গাছেই ফল পাওয়া যায় তবে যে অঞ্চলে বৃষ্টিপাত এবং ভাইরাসের সমস্যা বেশী থাকে, সেই সব অঞ্চলে দু মাস আগে পলিথিন শেড করে বীজ রোপন করে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে মূল জমিতে চারা রোপন করা হয়। ঢালু জমিতে মার্চ এপ্রিলে চারা রোপন করা যায় কিন্তু সেক্ষত্রে গাছ বেশি লম্বা হতে দেখা যায় ।
(ছ) পেঁপে চারা রোপণ পদ্ধতি :-
মূল জমিতে পেঁপে চারা রোপন করার জন্য ৪৫সে.মি. x ৪৫ সে.মি. x ৪৫ সে.মি. সাইজের গর্ত করে প্রতি গর্তে ২০ কেজি গোবর/কম্পোস্ট সার ১ কেজি নিমকেক , কার্বোফুরান ৩ -জি (৮ কেজি / প্রতি একর )সহ মাটি দিয়ে ভরাট করতে হবে । প্রতিটি গর্তে দুইটি চারা (ডায়োসিয়াস গোত্র এটি পুরুষ স্ত্রী দুটোই থাকে ) এবং একটি চারা (গাইনোডায়োসিয়াস গোত্র এটি সব স্ত্রী গাছ হয় ) লাগানোর পর ক্যাপ্টান মিশ্রিত (২ গ্রাম প্রতি লিটার) হালকা জল দেওয়া উচিত।
(জ) পেঁপে চারা রোপনের ঘনত্ব :-
পেঁপে গাছের চারা রোপনের ঘনত্ব, জাত, জমির উর্বরতা এবং বৃষ্টিপাতের পরিমাণের উপর নির্ভর করে ।লম্বাজাতের ক্ষেত্রে ৬.৫ ফুট x ৬.৫ ফুট = ১০০০ চারা / একর , মাঝারি জাতের ক্ষেত্রে ৬ ফুট x ৬ ফুট = ১২০০ চারা , বেটে জাতের ক্ষেত্রে ৫ফুট x ৫ ফুট = ১৮০০ চারা/একর।
(ঝ)পেঁপে গাছে সার প্রয়োগ :-
পেঁপে গাছ ও ফল তাড়াতাড়ি বৃদ্ধি হয় তাই বৃদ্ধি যেন ব্যাহত না হয় তার জন্য নিয়মিত খাদ্য যোগান দেওয়া দরকার। নিন্মে উল্লেখিত সারগুলি প্রতি বৎসর প্রতি গাছের জন্য সময় মতো প্রয়োগ করতে হয় -
গোবর বা কম্পোস্ট সার ১৫ কেজি ,নিম কেক ১.৫ কেজি ৩ বার ভাগ করে দিতে হয় এবং ইউরিয়া- ১০০ গ্রাম ,সিঙ্গল সুপার ফসফেট ২৫০ গ্রাম ,পটাস ১০০গ্রাম অজৈব সার গুলি ২ মাস পর পর প্রতি গাছে গোড়ায় শাখা প্রশাখা বৃদ্ধি ও ফুল আসার সময়ে প্রয়োগ করতে হয় ।
পেঁপে গাছে ফুল আসার সময় এক বা দুইবার ZnSo4 প্রতি লিটার জলে ৫ গ্রাম এবং বোরাক্স 1 গ্রাম প্রতি লিটার জলে স্প্রে করলে ফলের সাইজ ভাল হয়।
(ঞ) পেঁপে গাছে জল সেচ :-
প্রথম বছর সীমিত ভাবে জলসেচের প্রয়োজনএবং দ্বিতীয় বৎসর থেকে শীতকালে ১০ দিন অন্তর এবং গ্রীষ্মকালে ৫ দিন অন্তর জলসেচের প্রয়োজন হয়।
(ট) পেঁপ গাছের পরিচর্যা :-
ঠিকমত পরিচর্যা করলে পেঁপে গাছে ৪-৭ মাসেই ফুল আসে। ডায়োসিয়াস গোত্রের (স্ত্রী ও পুরুষ গাছ আলাদা হয় ) ক্ষেত্রে ফুল আসার পর প্রতি গর্তে একটি গাছ রেখে বাকীগুলিকে সরিয়ে ফেলা উচিত জেটিতে প্রতি ১০ টি স্ত্রী গাছের জন্য একটি পুরুষ গাছ থাকে। গাইনোডায়োসিয়াস গোত্রের গাছের জন্যে একটি চারা রোপন করলেই হয় , পুরুষ বা স্ত্রী আলাদা হয় না।
পেঁপে বাগানের আগাছা নিয়ন্ত্রণ নিয়মিত করে রোগ বাহক পোকার আশ্রয়স্থল নষ্ট করতে হবে।
পেঁপের পুরোনো শুকনো ও ভাইরাস আক্রান্ত পাতাকে সরিয়ে ফেলতে হয় ।
একই পেডিসেলে ২ বা ৩টি ফল ধরলে, শুধু একটি ফল রেখে, বাকীগুলি সরানো উচিত তাহলে ফলের সাইজ ভালো পাওয়া যায় এবং নতুন ফল বেশি পাওয়া যায়।
পেঁপে গাছে ফল ধরলে গাছ ফলের ভরে যেন না পরে যায় তার জন্যে বাশ দিয়ে ঢোকা দেওয়া দরকার গাছ গুলিকে।
(ঠ) পেঁপের রোগ পোকা দমন পদ্ধতি :-
পেঁপের প্রধান পোকা মেলিবাগ , গ্রানারা ডি উইলিঙ্ক , প্যারাকোকাস মার্জিনেটাস উইলিয়ামস এঁরা পেঁপে গাছের বেশি ক্ষতি করে তবে পেঁপে চাষ করতে হলে পেঁপে গাছ ও ফলকে আক্রান্ত করে এমন সব ধরণের রোগ পোকা আক্রমণের কারণ লক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে নিন্মলিখিত রোগ পোকা গুলি জেনে পেঁপে বাগানের যত্ন নিতে হয়।
(১) পেঁপে গাছের ঢলে পড়া রোগ -
বীজতলাতে পেঁপে চারাগুলি পচে যায় বা ঢলে পড়ে আবার চারা রোপনের কিছদিন পর অনেক চারা গাছকে ঢোলে পড়তে দেখা যায় ।
পেঁপে গাছের ঢলে পড়া রোগ দমন :-
বীজ বোনার আগে বীজকে ট্রাইকোডারমা ভিরিডি দিয়ে অথবা ক্যাপ্টান ৩-৪ গ্রাম দিয়ে প্রতি কেজি বীজ শোধন করে নিতে হরিডোমিল প্রতি লিটার জলে ১ মি.লি.বা ব্যাভিস্টিন প্রতি লিটার জলে ২ গ্রাম দিয়ে বীজতলা বা মাটি ভিজিয়ে দেওয়া উচিত।
(২) পেঁপে গাছের কান্ড বা গোড়া পচা রোগ :-
পেঁপে জমিতে জল জমে থাকার কারণে এই রোগ হয় , এর জন্যে জমির জল নিকাশি ব্যবস্থা রাখা আবশ্যক। গাছের গোড়ায় জল জমলে পাতাগুলি ঝিমিয়ে নুয়ে পড়ে এবং গোড়া গুলি পচে যাওয়ার কারণে গাছগুলি মাটিতে পড়ে যায়।
পেঁপে গাছের কান্ড বা গোড়া পচা রোগ দমন ব্যবস্থা :-
এই রোগ থেকে পেঁপে গাছ কে সুরক্ষিত রাখার জন্যে প্রতি লিটার জলে ২ গ্রামথিরাম বা ক্যাপ্টাম মিশিয়ে দিয়ে বীজ শোধন করা এবং চারা লাগানোর সময় মূলের চারিদিকে বা চারা রোপন গর্তে গোবরের সাথে ট্রাইকোডারমা ভিরিডি ১৫ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে। প্রতি লিটার জলে রিডোমিল mz বা কার্বেনডাজিম ১ গ্রাম বা ব্লাইটন্স ৩ গ্রাম প্রতি লিটার জলে অথবা বোর্দ্য দ্রবণ ১% দিয়ে ১০-১৫ দিন অন্তর গাছের গোড়ার মাটি ভিজিয়ে দিলে অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
(৩) পেঁপে গাছের ক্ষত রোগ :-
এটি একটি পেঁপে গাছের ছত্রাকঘটিত রোগ। প্রথমে গাছের কাঁদে দেখা যায় পরে এটা পেঁপের পাতা, ফুলে এবং ফলে হতে পারে। সাদা হয়ে কান্ডগুলি পচে ক্ষত হয়ে গাছ মাটিতে পড়ে যায় ।
পেঁপে গাছের ক্ষত রোগ প্রতিরোধ :-
এই রোগ দেখা দিলে প্রতি লিটার জলে কার্বেনডাজিম ১ গ্রাম বা ডাইফল্টন প্রতি লিটার জলে ২গ্রাম দিয়ে স্প্রে করতে হয় । চারা রোপনের পর থেকে একরে ১৫ টি হলুদ কার্ড ব্যবহার করা দরকার।
(৪) পেঁপে গাছের মোজাইক রোগের প্রতিকার :-
এই রোগ ছোট বড় সব পেঁপে গাছেই দেখা যায়। প্রতমে গাছের উপরের পাতাগুলি হলুদ বর্ণ ধারণ করে এবং হলুদ হতে শুরু করে। এই রোগ সংক্রমণের কারণে গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।
পেঁপে গাছের মোজাইক রোগ প্রতিরোধ :-
চারা উৎপাদনের সময় চারা গুলিকে নাইলন নেট মশারির মতো বানিয়ে রাখতে হয় এবং মূল জমিতে রোপনের পর জমিকে আগাছামুক্ত রাখতে হবে।এটি ভাইরাস বাহক তাই ভাইরাসের বাহককে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্রতি লিটার জলে ২ মি.লি. মেটাসিসটক্স দিয়ে বা রোগর প্রতি লিটার জলে ২ মি.লি. দিয়ে ১০-১৫ দিন অন্তর স্প্রে করা প্রয়োজন। চারা রোপনের পর থেকে একরে ১৫ টি হলুদ কার্ড ব্যবহার করা দরকার।
(৫) পেঁপে গাছের পাতা কুঁকড়ানো রোগ :-
রোগটির বাহক হল সাদা মাছি। এই রোগ ছোট বড় সব পেঁপে গাছেই হয় তবে ছোট গাছ গুলিতে বেশি আক্রমণ করে ও বড় গাছের কচি পাতা গুলিতে আক্রমণ করে ফলে পেঁপে পাতাগুলি কুঁকড়িয়ে যায় এবং পাতার শিরাগুলি স্পষ্ট ও আক্রান্ত গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।
পেঁপে পাতা কোঁকড়ানো রোগ প্রতিরোধের উপায় :-
রোগের বাহককে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্রতি লিটার জলে নুভাক্রন ৫মি.লি. বা মেটাসিসটক্স প্রতি লিটার জলে ২ মি.লি. বা কনফিডর প্রতি লিটার জলে ১.৫ মি.লি. স্প্রে করে রোগ দমন করা যায় । চারা রোপনের পর থেকে একরে ১৫ টি হলুদ কার্ড ব্যবহার করা দরকার।
৬) পেঁপে গাছের লিফ ব্লাইটস রোগ :-
পেঁপে পাতাগুলি প্রথমে বর্ণহীন হয়। পাতার একটি নির্দিষ্টি জায়গায় হলুদ দাগ হয়ে অবস্থান করে পরে সেগুলি পাতার সব জায়গাতে ছড়িয়ে পড়ে এবং পাতা গুলি বাদামি হয়ে শুকিয়ে যায় ও গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত করে । এটি পেঁপে গাছের মারাত্মক একটি রোগ।
পেঁপে গাছের লিফ ব্লাইটস রোগ প্রতিরোধ :-
পেঁপে গাছে এই রোগের লক্ষণ দেখা দিলে ডাইথেন- M-45 স্প্রে করা দরকার। নিয়মিত পরীক্ষায় বাগানকে রাখা উচিত ।
(৭) পেঁপে গাছের অ্যাফিডস পোকা নিয়ন্ত্রণ :-
রোগের বাহককে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্রতি লিটার জলে নুভাক্রন ৫মি.লি. বা মেটাসিসটক্স প্রতি লিটার জলে ২ মি.লি. বা কনফিডর প্রতি লিটার জলে ১.৫ মি.লি. স্প্রে করা দরকার হয় । চারা রোপনের পর থেকে একরে ১৫ টি হলুদ কার্ড ব্যবহার করা দরকার।
(৮) পেঁপে গাছের লাল মাকড় পোকা :-
পেঁপে গাছে লাল মাকড় আক্রমণের ফলে বিভিন্ন দাগ তৈরী করে, যার জন্য ফলের বাজার মূল্য কমে যায়।
পেঁপে গাছের লাল মাকড় প্রতিরোধ :-
প্রতি লিটার জলে ফসফামিডন ০.৫ মি.লি.বা ডাইকোফল প্রতি লিটার জলে ২ মি.লি. দিয়ে স্প্রে করা দরকার হয় ।
(৯) পেঁপে গাছের নিমাটোড রোগ :-
পেঁপে গাছ নিমাটোড আক্রান্ত হলে গাছগুলির পাতা হলুদ বর্ণ ধারণ করে এবং পরে ধীরে ধীরে পাতা এবং ফল ঝরে পড়ে। গাছের মুলে বা শিকড়ে ছোট ছোট গোলাকৃতি আকার দেখা যায়।
পেঁপে গাছের নিমাটোড নিয়ন্ত্রণ :-
এই রোগ প্রতিরোধের জন্যে চারা লাগানোর আগে প্রতি গর্তে নিমকেক ব্যবহার করতে হয় এবং কার্বোফুরান ৩ -জি ৮ কেজি প্রতি একর জমিতে দিয়ে চাষ করে নিতে হয়।
(১০) পেঁপে গাছের পাতা হলুদ হলে করনীয় :-
পর্যাপ্ত জলের অভাবে গাছ মাটি থেকে খাদ্য গ্রহণ করতে পারে না ফলে অপুষ্টিতে ভোগার কারণে গাছের নিচের পাতা গুলি হলুদ হতে হতে উপরের দিকে ওঠে এবং পাতা গুলি সম্পর্ণ হলুদ হয়ে শুকিয়ে যায়।
আর একটি কারণে পাতা হলুদ হয় কিন্তু গাছের উপরের পাতা গুলি থেকে ধূসর হলুদ হতে থাকে সেটি মোজাইক ভাইরাস কারণে তাই এই দুটো রোগ এর লক্ষন বুঝে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হয়।
পেঁপে গাছের পাতা হলুদ হতে শুরু করলে গাছের গোড়ায় জল দিতে হবে এবং জল দেওয়ার পূর্বে গাছের দেড় ফুট দূরে রিং করে ৫০ গ্রাম ইউরিয়া এবং ৭০ গ্রাম ফসফেট দিয়ে মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হয়।
(১১) পেঁপে গাছের ফুল ঝরে যাওয়ার কারণ ও প্রতিকার :-
পেঁপে গাছের ফুল ঝরে যাওয়ার অনেকগুলি কারণ এদের মধ্যে সম্ভাব্য কিছু কারণ হল -
পেঁপে ফুল নিষিক্ত না হওয়া , এটা হতে পারে পুরুষ গাছের অনুপস্থিতি এবং অধিক পরিমানে রাসায়নিক কীটনাশক প্রয়োগের প্রভাব যার কারণে পরাগ সংযোগকারী পোকার অনুপস্থিতি। প্রতিকার এর জন্যে জৈব পদ্ধতি অবলম্বন করা উচিত যেমন জৈব কীটবিতারক ,হলুদ কার্ড , ফেরোমোন লিওর ফাঁদ ব্যবহার করা উচিত।
শুস্ক আদ্রতা এবং মাটিতে পর্যাপ্ত রস না থাকার কারণে পেঁপে ফুল ঝরে পরে।
পুষ্টিযুক্ত অনুখাদ্যের অভাব এবং অত্যাধিক পরিমানে সার প্রয়োগ যেমন নাট্রোজেন বেশি হলে গাছের গোড়ায় এমোনিয়া বেড়ে গিয়ে গাছের খাদ্য গ্রহণ প্রক্রিয়াকে বাধাদান করে এবং ফুল ঝরে পড়ে। এর প্রতিকার এর জন্যে নিয়মিত গাছের চাহিদা অনুসারে খাদ্য প্রয়োগ করা উচিত এক সাথে বেশি দেওয়া পরিবর্তে।
পোকা এবং ভাইরাস দ্বারা পেঁপে গাছ আক্রান্ত হল ফুল ঝরে যায় এবং চিকিৎসা না হওয়া পর্যন্ত নতুন ফুল আসে না পর্যাপ্ত পরিমানে। প্রতিকার এর জন্যে জৈব পদ্ধতি অবলম্বন করা উচিত যেমন জৈব কীটবিতারক ,হলুদ কার্ড , ফেরোমোন লিওর ফাঁদ ব্যবহার করা উচিত।
পেঁপে গাছে ফুল আসলে অনুখাদ্য ব্যবহার করা এবং রাসায়নিক কীটনাশক কমিয়ে জৈব কীটনাশক , পোকা নিয়ন্ত্রণ ফাঁদ যেমন হলুদ কার্ড ও ফেরোমোন লিওর ফাঁদ ব্যবহার করা উচিত।
(১২) পেঁপে গাছের ফল ঝরে যাওয়ার কারণ :-
পেঁপে গাছের ফল ঝরে পড়ার জন্যে অনেকগুলি কারণ দায়ী থাকে -
পেঁপে গাছে ফল আসার পর বাতাসে শুস্কতার পরিমান বৃদ্ধি এবং পর্যাপ্ত পরিমানে জল না পেলে পেঁপে ফল ঝরে যায়। আবার গাছের গোড়ায় অধিক জল জমলে পরেও ফল গুলি হলুদ হয়ে ঝরে পরে।
ফলের মাছি লার্ভা দ্বারা পেঁপে সংক্রমিত হলে ফল গুলি ক্ষত হয়ে হলুদ রং ধারণ করে মাটিতে পরে যায়। এটি বোঝা যায় যখন ফল গুলি গাছেই কুঁচকে যায় হলুদ হয়ে।
পেঁপে ফল গুলি ফাইটোফথোরা ব্লাইট আক্রমণ হলে গাছেই কুঁচকে গিয়ে ছোট হয়ে গিয়ে মাটিতে পরে যায়। গাছের পাতা গুলি বাদামি হয়ে শুকিয়ে যায় এবং কখনো গাছ গুলি ভেঙে যায়।
অপুষ্টির কারণে পেঁপে ফল গুলি সঠিক ভাবে বাড়তে না পেরে ঝরে পরে যায়।
পেঁপে গাছের ফল ঝরা নিয়ন্ত্রণ :-
পেঁপে ফল ঝরা নিয়ন্ত্রণের জন্যে গাছের জন্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে সেচ দেওয়া প্রয়োজন এবং গাছের গোড়ায় জল যেন না দাঁড়ায় সে জন্যে জল নিষ্কাশন ব্যবস্থা রাখা জরুরি।
ফল ছিদ্রকারী মাছি পোকা নিয়ন্ত্রণের জন্যে ফেরোমোন লিওর ফাঁদ একরে ১৫ টি ব্যবহার করতে হবে।
ফাইটোফথোরা ব্লাইট আক্রমণ হলে কোপার হাইড্রোক্সাইড ম্যানকোজেব স্প্রে করে এই রোগ প্রতিরোধ করা যায়।
গাছের পুষ্টি মাত্রা পর্যাপ্ত পরিমানে নিশ্চিত করতে হবে তাই ফুল আসার সময় গাছের গোড়ায় খাদ্য প্রয়োগ করতে হয়।
(ড) পেঁপে চাষের আয় ব্যয় :-
পেঁপে গাছ ২-৪ বছর পর্যন্ত ফল দেয় তবে প্রথম ২ বছর বেশি ফলন পাওয়া যায় পরে ধীরে ধীরে উৎপাদন কমতে থাকে। বাগানের সব পেঁপে গাছে ফল পাওয়া যায় না , প্রায় ৮০% গাছ ফল দেয় কারণ পেঁপের ২০% গাছ রোগে আক্রান্ত হয়ে নষ্ট হবেই। বাগানে ৮০% পেঁপে গাছের মধ্যে ৬০% গাছ ভালো ফল দেয়। লাভের হিসেবে করতে হলে সরনিন্ম উৎপাদন দিয়ে হিসেবে বের করতে হয় সেক্ষেত্রে এখানে বাগানের ৬০% গাছের উৎপাদন ও পেঁপের গড় ফলন বা ওজন দিয়ে হিসেবে বের করা হল।
ফলন নির্ভর করে জাত, মাটির উর্বরতা, আবহাওয়া এবং বাগানের পরিচর্যার উপর। প্রতিটি ফলের মরশুমে এক একটি গাছে প্রায় ২০-৪০ টি ফল ধরে । সঠিক ভাবে যদি পেঁপে গাছের পরিচর্যা করা যায় তবে ৬ ফুট দূরত্বে চারা রোপন করলে তবে এক একর জমিতে ১২০০ চারা বসানো যায়। একরে ১২০০ পেঁপে চারা রোপন করলে ২ বছরে গাছ প্রতি ৬০ -৮০ টাকা খরচ ধরলে মোট গড় খরচ হয় ৭০ টাকা হলে ৮৪০০০০ টাকা । এক একটি গাছে ২ বছরে ন্যূনতম গড় ফলন ৪০-৬০ কেজিতে ৫০ কেজি গড় ফলন এবং ১২০০ চারার ৬০% অধিক ফলন গাছ এর হিসেবে করলে ৭২০টিগাছ × ৫০ কেজি ৩৬০০০ কেজি বা ৩৬০ কুইন্টাল বা ৩৬ টন গড় পেঁপের ফলন পাওয়া ফলন পাওয়া যাবে ২ বছরে। কাঁচা বা পাকা মিলে এভারেজ দাম ২০ টাকা কেজি ন্যূনতম দাম ধরলে ৩৬০০০কেজি ×২০ টাকা = ৭২০০০০ টাকা বা ৭ লক্ষ কুড়ি হাজার টাকার ব্যবসা হয়। বিভিন্ন জায়গায় বাজার বিভিন্ন হয় তাই এখানে সর্বনিম দাম ধরে লাভ তুলে ধরা হয়েছে । খরচ বাদ দিয়ে একর প্রতি ৭২০০০০ -৮৪০০০ টাকা =৬৩৬০০০ টাকা লাভ এর কম এবং বেশি লাভ হবে।
বছরে এক একর জমি থেকে পেঁপে চাষ করে ৩১৮০০০ টাকা এবং ৩৩ শতকে এক বিঘা হিসেবে বিঘা প্রতি ১০৬০০০ টাকা লাভ হয়।
(ঢ) পেঁপে গাছের উপকারিতা :-
পেঁপে শুধুমাত্র পাকা মিষ্টি ফলের জন্য চাষ করা হয় না, কাঁচা পেঁপে এমনকি গাছের অন্যান্য অংশ যেমন বীজ, পাতা, শিকড়, ফুল, ছাল ঐতিহ্যগতভাবে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন ঔষধি তৈরির জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে। পেঁপে একটি মহৌষধি গুন্ সম্পর্ণ ফল।
(১) পেঁপের পাতার উপকারিতা :-
ভারতে পেঁপের সেদ্ধ পাতা ম্যালেরিয়াল এবং ডেঙ্গু জ্বরের উপশম হিসাবে ব্যবহার করা হয়। ভাইরাল জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের প্লেটলেট সংখ্যা এবং লাল ও সাদা রক্তকণিকা বাড়ানোর জন্য পেঁপের পাতার নির্যাস আয়ুর্বেদ চিকিৎসকদের দ্বারা সুপারিশ করা হয়।
কিছু বৈজ্ঞানিক গবেষণায় পেঁপে পাতায় গ্লাইকোসাইড, ফ্ল্যাভোনয়েড, অ্যালকালয়েড, স্যাপোনিন, ফেনোলিক যৌগ, অ্যামিনো অ্যাসিড, লিপিড, কার্বোহাইড্রেট, এনজাইম, ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থের যথেষ্ট পরিমাণের অস্তিত্ব প্রকাশ করেছে এবং তাজা পেঁপে পাতায় অ্যান্টিসেপটিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে, এবং শুকনো পাতায় রক্তকে বিশুদ্ধ করতে ও হজমশক্তি উন্নত করতে টনিক হিসাবে কাজ করে।
পেঁপে পাতার নির্যাস সেবনে -ক্যান্সার প্রতিরোধ শক্তি বাড়ে।
পেঁপে পাতার ভিটামিন, খনিজ পদার্থ এবং অ্যামিনো অ্যাসিড মানুষের মোট হিমোগ্লোবিন, প্রোটিন এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে বেশ সহায়ক
ভেষজ পাতাগুলি বিভিন্ন শারীরিক ব্যাধি এবং ভাইরাল জ্বর যেমন ডেঙ্গু এবং চিকুনগুনিয়ার চিকিত্সার জন্য আয়ুর্বেদ ফর্মুলেশনে ব্যবহার করা হয়।
পেঁপে পাতা কোষ্ঠকাঠিন্য, দুর্বলতা, অ্যামেনোরিয়া, মাসিক সমস্যা, একজিমা, সাইনাস, ত্বকের টিউবারকল, গ্ল্যান্ডুলার টিউমার, ডায়াবেটিস, আলসার, উচ্চ রক্তচাপ, ডেঙ্গু ইত্যাদি নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়।
পেঁপে পাতায় ভিটামিন E, A, এবং C এর পাশাপাশি, তাদের ভিটামিন B-17 রয়েছে যার ঘনীভূত ফর্ম প্রচলিত কেমোথেরাপি চিকিৎসায় ক্যান্সার রোগীদের নিরাময় করতে ব্যবহৃত হয়।
(2) পেঁপে ফলের উপকারিতা :-
পেঁপে মিষ্টি ফল গুলির মধ্যে অন্যতম একটি ফল যার মধ্যে পরিমিত পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট এবং ক্যালোরি রয়েছে। এটি কাঁচা এবং পাকা দুটোই প্রচুর চাহিদা রাখে মানুষের মাঝে।
পেঁপেতে উপস্থিত প্যাপেইন এনজাইম এবং উচ্চমাত্রার ফাইবার ,ভিটামিন সি, লাইকোপেন ,উচ্চ পরিমাণে ক্যারোটিনয়েড ,অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং পুষ্টি হৃদরোগের উন্নতি করে ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় ,দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহজনিত রোগ কমায়, লিভারের রোগ, ডায়াবেটিস এবং আলঝেইমার রোগের কারণে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমায় ,ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।
তথ্যসূত্র :-
কৃষি বিভাগ বাংলাদেশ সরকার।
ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিন ,ভারত।
FAQ ( প্রায়ই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী ):
১। আধুনিক পদ্ধতিতে পেঁপে চাষে বেশি ফলনের জন্যে কি প্রয়োগ করা উচিত ?
উত্তর - উন্নত ভাবে পেঁপে চাষ করতে হলে প্লাস্টিক মালচিং বা খড় দিয়ে মালচিং করতে হবে এবং সেচের জন্যে ড্রিপ ইরিগেশন বা বিন্দু সেচ ব্যবহারের জন্যে পাইপ বসাতে হবে। বৃষ্টি না থাকলে প্রতিদিন ১ ঘন্টা জল দিতে হবে নিয়মিত। বিন্দু সেচ প্রদানের সময় জলে মাইক্রোনিউট্রেন্ট এবং ফোলিওর বা স্প্রে সার যোগ করে জল দিতে হবে ৭ দিন অন্তর। পেঁপে গাছ জল পছন্দ করে না আবার গোড়া শুকিয়ে গেলে গাছ বেড়ে ওঠেনা তাই আদ্রতা ধরে রাখা জরুরি মাটিতে।
২। পেঁপের রোগ দমনের সঠিক উপায় কি ?
উত্তর -রোগ পোকা দমনের জন্যে রোগের অপেক্ষায় থাকা যাবে না তাই নিয়মিত নিঁম তেল ৭ দিন অন্তর এবং ছত্রাক নাশক ১৫ দিন অন্তর স্প্রে করতে হবে গাছে। যদি কাজ না হয় ইমিডাক্লোরপিড ব্যবহার করতে হবে ১৫ দিন অন্তর। এর ফলে পাতা কোঁকড়ানো মতো ব্যাধি থেকে পেঁপে গাছকে রক্ষা যাবে। মোজাইক ভাইরাস আসে জাবপোকার মাধ্যমে তাই পোকা যেন না আসে তার আগাম ব্যবস্থা হিসাবে উপরোক্ত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
৩। জৈব পদ্ধতিতে পেঁপে চাষ কিভাবে করা যায় ?
উত্তর -জৈব ভাবে পেঁপে চাষ করতে গেলে শুধু গোবর সার দিয়ে ভালো হবে না। এর জন্যে জৈব কয়েকটি সার এবং কীটবিতারক প্রস্তুতি জানা প্রয়োজন। যেমন জীবান্মৃত ,ঘন জীবান্মৃত ,নিমাস্ত্র,অগ্নিঅস্ত্র এবং ছত্রাক নাশক দ্রবণ। গাছের গোড়া মালচিং করতে হবে খোর দিয়ে এবং নিয়মিত ২১ দিন অন্তর জলের সাথে জীবান্মৃত এবং গাছের গোড়ায় ঘন জীবান্মৃত ও পাতায় নিমাস্ত্র,অগ্নিঅস্ত্র এবং ছত্রাক নাশক দ্রবণ ব্যবহার করতে হবে ৭ -১৫ দিন অন্তর। ফলন বেশি হবে স্বাদ ভালো হবে।
৪। পেঁপের অধিক ফলন কিভাবে পাওয়া যায় ?
উত্তর -ভালো জাত নির্বাচন ,ভালো রোপন পদ্ধতি হতে হবে ,এবং সঠিক সময়ে গাছে সেচ প্রদান ,গাছে জৈব সারের প্রয়োগ বাড়ানো এবং নিয়মিত রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার জন্যে আগাম ব্যবস্থা নেওয়া। ফল আসলে বোরন এবং মাইক্রোনিউট্রেন্ট এর ব্যবহার করা এবং কম সময়ে ফল ছিড়ে ফেলা তাহলে ফলন বেশি পাওয়া যাবে।