কেঁচো সার বা ভার্মি কম্পোষ্ট | Earthworm Manure/kecho Sar/Vermicompost
কেঁচো সার বা ভার্মি কম্পোষ্ট | Earthworm Manure/kecho Sar/Vermicompost
কেঁচো খাবার খেয়ে মল হিসাবে যা ত্যাগ করে তাই কেঁচোসার।
ভার্মি কম্পোষ্ট’ বা কেঁচোসারে মাটির পানি ধারণ করার ক্ষমতা ও মাটি নরম করার ক্ষমতা তো আছেই,এ ছাড়া আছে আটাশি দশমিক ৩২ ভাগ জৈব পদার্থ, এক দশমিক ৫৭ ভাগ নাইট্রোজেন, এক দশমিক ২৬ ভাগ বোরন-যেগুলো অন্যান্য জৈব সারে এত বেশি পরিমাণে নেই।
কেঁচো সার (VermiCompost):
উদ্ভিদ ও প্রাণিজ বিভিন্ন প্রকার জৈব বস্তুকে কিছু বিশেষ প্রজাতির কেঁচোর সাহায্যে কম সময়ে জমিতে প্রয়োগের উপযোগী উন্নত মানের জৈবসারে রূপান্তর করাকে ভার্মিকম্পোস্ট বা কেঁচোসার বলে।
পুষ্টিমান:কেঁচো সার গাছের অত্যাবশ্যকীয় ১৬টি খাদ্য উপাদানের ১০টিই বিদ্যমান। গবেষণায় দেখা গেছে, আদর্শ ভার্মিকম্পোস্টে জৈব পদার্থ ২৮.৩২ ভাগ, নাইট্রোজেন ১.৫৭ ভাগ, ফসফরাস ১.২৬ ভাগ, পটাসিয়াম ২.৬০ ভাগ, ক্যালসিয়াম ২ ভাগ, ম্যাগনেসিয়াম ০.৬৬ ভাগ, সালফার ০.৭৪ ভাগ, বোরন ০.০৬ ভাগ, আয়রন ৯৭৫ পিপিএম, ম্যাঙ্গানিজ ৭১২ পিপিএম, জিঙ্ক ৪০০ পিপিএম এবং কপার ২০ পিপিএম রয়েছে।
কেঁচোসার বা ভার্মিকম্পোস্টের গুরুত্ব: বিজ্ঞানী চালর্স ডারউইন সর্বপ্রথম কেঁচোর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা সবাইকে অবগত করান।
তিনি বলেন কেঁচো ভূমির অন্ত্র এবং পৃথিবীর বুকে উর্বর মাটি তৈরি করার ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করে, যার ওপর ফসল উৎপাদন করি।
এ অতি সাধারণ, ক্ষুদ্র প্রাণীটি পচনশীল জৈবপদার্থ থেকে সোনা ফলাতে পারে, কেঁচোসার বা ভার্মিকম্পোস্টে রূপান্তরিত করে।
আহার পর্বের পর যে পাচ্য পদার্থ মলরূপে নির্গমন হয় তাকে কাস্ট বলে। এ কাস্টের ভেতর জীবাণু সংখ্যা এবং তার কার্যকলাপ বাড়ার কারণে মাটির উর্বরতা বাড়ে।
দেখা গেছে, পারিপার্শ্বিক মাটির তুলনায় কাস্টের মধ্যে জীবাণু সংখ্যা প্রায় হাজার গুণ বেশি।
এ কাস্টের ওপরে বিভিন্ন প্রকার উৎসেচক উৎপাদনকারী ব্যাক্টেরিয়া জীবাণু বেশি থাকায় মাটির উর্বরতাও বাড়ে।
কাস্টের কারণে মাটি থেকে গাছে ৬ শতাংশ নাইট্রোজেন এবং ১৫-৩০ শতাংশ ফসফরাস যোগ হতে দেখা গেছে।
এছাড়াও অন্যান্য উদ্ভিদ খাদ্য উপাদান ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম গাছ বেশি পরিমাণে গ্রহণ করতে পারে।
কেঁচোর উপস্থিতিতে জৈবপদার্থের কার্বন ও নাইট্রোজেন অনুপাত প্রায় ২০:১ এর কাছাকাছি হয়। এ অনুপাতে গাছ সহজেই কম্পোস্ট থেকে খাদ্য গ্রহণ করতে পারে।মাঠ পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, কেঁচো সার ব্যবহারে মাঠ ফসলে ফলন শতকরা ২০ থেকে ২৫ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে।
সবজিতে ফলন বৃদ্ধিসহ গুণগতমান ও স্বাদ বাড়ে। এমনকি ফল না ধরা অনেক পুরনো ফল গাছে নতুন করে ফল ধরাসহ ফলদ বৃক্ষে দুইগুণ অবধি ফলন বেড়েছে। জমির স্বাস্থ্য ও উর্বরতা বজায় রাখার জন্য জৈব সার ব্যবহারের প্রবণতা ক্রমশ বাড়ছে।
মানুষ এখন অনেক বেশি সচেতন এ ব্যাপারে।
তাই ভার্মিকম্পোস্ট উৎপাদন ও তার ব্যবহার এক মূল্যবান ভূমিকা পালন করতে চলেছে আগামী দিনগুলোতে
সঠিক ভাবে মান নিয়ন্ত্রিত হওয়ায় মাটিতে জৈব পদার্থের ঘাটতি দ্রুত পূরণ হয়।
ফসলের পুষ্টি উপাদানের আঁধার ঘর হিসেবে কাজ করে, ফলে গাছ সহজে পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করতে পারে। রাসায়নিক সারের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়, ফলে ২৫% পর্যন্ত রাসায়নিক সার কম লাগে।
মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।, ফলে জমির উর্বরতা শক্তি বাড়ে ও শেচ খরচ কমে। ট্রাইকোডার্মা সমৃদ্ধ হওয়ায় ফসলে মাটি বাহিত রোগ কম হয়। প্রয়োগমাত্রা কম হওয়ায় জমিতে সহজে প্রয়োগ করা যায়।
ভার্মি কম্পোস্ট কি কি কাজ করেঃ
1.মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি করে।
2.মাটির জীবনী শক্তি বৃদ্ধি করে গাছের জন্য প্রয়োজনীয় মাইক্রো এবং ম্যাক্রো পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে।
3.মাটিতে পানি ধারন ক্ষমাতা বাড়ায় ।
4.পর্যায়ক্রমিক ব্যবহারে রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে আনে।
5. কৃষিজ উৎপাদন বাড়ায় ফলে উৎপাদন খরচ কমে।
ব্যবহার বিধিঃ
ফসল ভেদে প্রতি শতাংশ জমিতে 1 থেকে 3 কেজি হিসাবে ভার্মি কম্পোষ্ট ব্যবহার করতে হবে।
